“ গবেষণা মুখি শিক্ষানীতি প্রণয়নের গুরুত্ব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা নীতি অবশ্যই গবেষণামুখী হওয়া উচিত। তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে।“ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) এর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি), চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, “গবেষণা করার জন্য আমাদের যে বাজেট দরকার সেটা আসলে এ বাজেটে যথেষ্ট নয়। আমাদের গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ অবশ্যই বাড়ানো উচিত এবং সেটা একটি প্ল্যান অনুযায়ী বাড়ানো উচিত। শিক্ষা খাতের সাথে যে ১১.৯৯ শতাংশ বরাদ্দ আছে তা এই খাতের জন্য যথেষ্ট নয় এবং এটি বাড়িয়ে ভবিষ্যতে আমাদের গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধ না করলে আমরা দেশের উন্নয়ন এবং উন্নত দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব নয় বলে আমি মনে করছি।“ এ ছাড়াও তিনি বলেন, “করোনা মোকাবেলায় যে বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য দেশ গবেষণা করছে আমরা কিন্তু সে জায়গায় যেতে পারছিনা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরী করা পর্যন্তই আছে। তাই পরিকল্পনা মাফিক বাজেটের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন।“ বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের জিডিপি ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন বলেন, ”কোন কোন দেশে এ বরাদ্দ ১২ শতাংশও আছে। শতাংশ দিয়ে সবসময় এটি বিচার করা সম্ভব না। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ হার ৩ শতাংশের কাছাকাছি। তাছারা অন্যান্য খাতের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। তাই আমি বলব এ ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই বরাদ্দ দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সরকারকে সামঞ্জস্য করে চলতে হয়। আমি মনে করি প্রতি খাতে বরাদ্দ যদি বাড়ানো হয় তবে বর্তমানের যে বরাদ্দ আছে তাও বাড়ানো যাবে এবং তা অবশ্যই দরকার।
“ শিক্ষা খাতে এবারের বরাদ্দ 66 হাজার 400 কোটি টাকা, এ বরাদ্দ দিয়ে করোনার ফলে শিক্ষা খাতে সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, (নোবিপ্রবি) এর অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, “ শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। আমরা ইতোমধ্যে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পড়েছি। যেমন অনলাইন ক্লাসের মত বিষয়ের জন্য আমরা তৈরী ছিলাম না। এবারের বাজেটে এ ধরনের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিলে ভালো হত।“ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট বরাদ্দের এক শতাংশেরও কম উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় রাখা কতটুকু কার্যকর জানতে চাইলে তিনি জানান, “ অনেক সময় নগণ্য যা বরাদ্দ আছে তাই ঠিকমত বন্টনের চিন্তা আমাদের প্রথমে থাকে না। যারা কাজ করতে চায় তারা পরবর্তীতে ফান্ড চাইলে দেখা যায় তাদের ফান্ড দেওয়া হচ্ছেনা। এভাবে তো আসলে গবেষনা হয়না। আর দিন দিন আমাদের এই অনিশ্চয়তার মাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং যেটুকু বরাদ্দ তারও সঠিক ব্যবহার আমরা করতে পারছিনা।“ অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে তারা প্রত্যেকেই ভবিষ্যতের শিক্ষা ও গবেষণা খাতের বাজেটে কোন কোন সেক্টর আলাদা ভাবে খেয়াল করতে হবে এবং বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে, পাশাপাশি তাদের নিজেদের অসুবিধাগুলো তুলে ধরে সে বিষয়ে মতামত দেন এবং এমন একটি আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটির সহ-যোগাযোগ সম্পাদক সাবরিনা শাহজাবীন আলম এবং তার সহযোগিতায় ছিলেন নওশীন বিনতে জামাল জুঁই।